ঢাকা ১২:০৭ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৩০ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৫ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

দেশের ৫২ জেলায় পানি পরীক্ষাগার প্রস্তূত মানুষের দোড়গোড়ায় পৌঁছাবে বিশুদ্ধ পানি

নিজস্ব সংবাদ :

মো: মইনুল ইসলাম বাদল চৌধুরী :

জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রায় ২০১৬ সালে বলা হয়েছিল,বিশ্বের ১৪০টি নিম্ন ও মধ্য আয়ের দেশে নিরাপদ খাবার পানি, স্যানিটেশন ও হাইজিনের ব্যবস্থা করতে ২০১৬ থেকে ২০৩০ সালের মধ্যে ১.৭ ট্রিলিয়ন ডলার খরচ হবে, অর্থাৎ বছরে ১১৪ বিলিয়ন ডলার। অথচ ২০১৫ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে পানি খাতে উন্নয়ন সহায়তা ১৫ শতাংশ কমেছে বলে এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়। এমন অবস্থায় পানি যে এত গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ, যা দ্বন্দ্বে থাকা দেশগুলোকে এক টেবিলে আনতে পারে। বিশ্ব পানি দিবসে ইউনেস্কার এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছিল বিশ্বে অন্তত ২২০ কোটি মানুষ বিশুদ্ধ পানি পায় না।

বিশুদ্ধ পানি থেকে বাংলাদেশও পিছিয়ে আছে। এমন অবস্থায় সুপেয় পানির জন্য নানা উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। যে কাজটি করছে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর। এবার দেশের ৫২ জেলায় পানির গুণগতমান পরীক্ষাগার উদ্বোধন হচ্ছে। যার মধ্য দিয়ে এসব এলাকার বাসিন্দারা বিশুদ্ধ পানি পাবেন।

জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন- কোনো স্থান ও এলাকার ভূগর্ভস্থ পানির মান সম্পর্কে তথ্য অনুসন্ধান করা ও পানির উৎসগুলোর গুণগতমান নিশ্চিত হওয়ার জন্য প্রয়োজন পানির গুণগত পরীক্ষাগার। পরীক্ষাগারে পানি পরীক্ষা শেষেই বলা যায় ওই স্থানের বা অঞ্চলের পানি কতটুকু বিশুদ্ধ। দেশে এমন পানি পরীক্ষাগার জেলা পর্যায়ে ছিল ১২টি। যা দেশের জনসংখ্যা ও আয়তনের তুলনায় খুবই কম। এতে সৃষ্টি হতো পানির গুণগতমান পরীক্ষা নিয়ে নানান জটিলতা।

মানুষের দোরগোড়ায় মানসম্পন্ন পানি পৌঁছে দিতে স্থানীয় সরকার বিভাগ জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের মাধ্যমে ১৭৮ কোটি ৫৬ লাখ টাকা ব্যয়ে ২০১৯ সালে ‘পানির গুণগতমান পরীক্ষা ব্যবস্থা শক্তিশালীকরণ’ প্রকল্প হাতে নেয়। যেখানে নতুন করে দেশের ৫২টি জেলায় পানির গুণগতমান পরীক্ষাগার স্থাপনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল।

ইতোমধ্যে এ প্রকল্পের কাজ শেষ হয়েছে। অবকাঠামো স্থাপনার কাজ শেষ ছাড়াও সব ল্যাবরেটরিতে প্রয়োজনীয় আসবাবপত্র, কম্পিউটার, ফটোকপিয়ার এবং ল্যাবরেটরির ইকুইপমেন্ট সরবরাহ করা সম্পন্ন হয়েছে। ইতোমধ্যে যশোর, গোপালগঞ্জ, কক্সবাজারসহ কয়েকটি জেলায় নিকটবর্তী পরীক্ষাগারের জনবল দিয়ে পরীক্ষামূলকভাবে পানি পরীক্ষা কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এতে সাধারণ মানুষ পানি পরীক্ষা করে নিশ্চিত হয়ে বিশুদ্ধ পানি পান করতে পারছেন। ৫২ জেলায় জনবল নিয়োগের প্রক্রিয়ায়ও শেষ পর্যায়ে। এর মধ্য দিয়ে আগামী জুন মাসে পূর্ণাঙ্গভাবে একযোগে চালু করা হবে পানি পরীক্ষাগারগুলো।

এসব বিষয়ে প্রকল্প পরিচালক মুন্সি মোঃ হাচানুজ্জামান বলেন, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের লক্ষ্যে নিরাপদ পানি সরবরাহ নিশ্চিত করার জন্য জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের এ প্রকল্পটি দেশের জণগণের জন্য শতভাগ বিশুদ্ধ পানি নিশ্চিতকরণে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনবে। বাংলাদেশের পানির গুণগতমান পরীক্ষার জন্য যে সব ল্যাবরেটরি রয়েছে তার মধ্যে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের পরীক্ষাগারসমূহ অন্যতম। পানির গুণগতমান পরীক্ষার ব্যবস্থা শক্তিশালীকরণ প্রকল্পের আওতায় স্থাপিত ল্যাবরেটরিসমূহের মাধ্যমে সমগ্র বাংলাদেশে পানি পরীক্ষা করা হবে। এতে বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষ নিরাপদ এবং পরীক্ষিত বিশুদ্ধ পানি পান করতে পারবে। ফলে জনসাধারণ নানা ধরনের রোগ ব্যাধি থেকে রক্ষা পাবে।

তিনি আরো বলেন,প্রকল্পটির কাজ শেষ করতে নানা চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হয়েছে। জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর সব সময়ই সততা, নিষ্ঠা ও দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিয়ে কাজ করছে। প্রকল্পটির নির্মাণ সামগ্রী থেকে শুরু করে সরঞ্জাম সবকিছু পুঙ্খানুপুঙ্খুভাবে তদারক করা হয়েছে। অসাধু চক্র সিন্ডিকেটের মাধ্যমে নিম্ন মানের মালামাল সরবরাহের চেষ্টা করেছিল। তবে, প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের তৎপরতার কারণে তা সম্ভব হয়নি। এরপর একটি চক্র ক্ষুব্ধ হয়ে প্রকল্প পরিচালকের বিরুদ্ধে নানা অপপ্রচার চালিয়েছিলো। যা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও বিভ্রান্তমূলক।

মুন্সি মোঃ হাচানুজ্জামান বলেন,অসাধুচক্রের অপতৎপরতার বিষয়ে স্থানীয় সরকার বিভাগও অবহিত ছিল বিধায় দায়িত্বশীল মানদন্ড অনুযায়ী দক্ষতার সঙ্গেই প্রকল্পের কাজ শেষ করা হয়েছে।জনগণ এর সুফল পাওয়ার অপেক্ষায় রয়েছেন।

ট্যাগস :

নিউজটি শেয়ার করুন

আপডেট সময় ০৬:৩৮:০৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ৩০ নভেম্বর ২০২৪
৪৩ বার পড়া হয়েছে

দেশের ৫২ জেলায় পানি পরীক্ষাগার প্রস্তূত মানুষের দোড়গোড়ায় পৌঁছাবে বিশুদ্ধ পানি

আপডেট সময় ০৬:৩৮:০৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ৩০ নভেম্বর ২০২৪

মো: মইনুল ইসলাম বাদল চৌধুরী :

জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রায় ২০১৬ সালে বলা হয়েছিল,বিশ্বের ১৪০টি নিম্ন ও মধ্য আয়ের দেশে নিরাপদ খাবার পানি, স্যানিটেশন ও হাইজিনের ব্যবস্থা করতে ২০১৬ থেকে ২০৩০ সালের মধ্যে ১.৭ ট্রিলিয়ন ডলার খরচ হবে, অর্থাৎ বছরে ১১৪ বিলিয়ন ডলার। অথচ ২০১৫ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে পানি খাতে উন্নয়ন সহায়তা ১৫ শতাংশ কমেছে বলে এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়। এমন অবস্থায় পানি যে এত গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ, যা দ্বন্দ্বে থাকা দেশগুলোকে এক টেবিলে আনতে পারে। বিশ্ব পানি দিবসে ইউনেস্কার এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছিল বিশ্বে অন্তত ২২০ কোটি মানুষ বিশুদ্ধ পানি পায় না।

বিশুদ্ধ পানি থেকে বাংলাদেশও পিছিয়ে আছে। এমন অবস্থায় সুপেয় পানির জন্য নানা উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। যে কাজটি করছে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর। এবার দেশের ৫২ জেলায় পানির গুণগতমান পরীক্ষাগার উদ্বোধন হচ্ছে। যার মধ্য দিয়ে এসব এলাকার বাসিন্দারা বিশুদ্ধ পানি পাবেন।

জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন- কোনো স্থান ও এলাকার ভূগর্ভস্থ পানির মান সম্পর্কে তথ্য অনুসন্ধান করা ও পানির উৎসগুলোর গুণগতমান নিশ্চিত হওয়ার জন্য প্রয়োজন পানির গুণগত পরীক্ষাগার। পরীক্ষাগারে পানি পরীক্ষা শেষেই বলা যায় ওই স্থানের বা অঞ্চলের পানি কতটুকু বিশুদ্ধ। দেশে এমন পানি পরীক্ষাগার জেলা পর্যায়ে ছিল ১২টি। যা দেশের জনসংখ্যা ও আয়তনের তুলনায় খুবই কম। এতে সৃষ্টি হতো পানির গুণগতমান পরীক্ষা নিয়ে নানান জটিলতা।

মানুষের দোরগোড়ায় মানসম্পন্ন পানি পৌঁছে দিতে স্থানীয় সরকার বিভাগ জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের মাধ্যমে ১৭৮ কোটি ৫৬ লাখ টাকা ব্যয়ে ২০১৯ সালে ‘পানির গুণগতমান পরীক্ষা ব্যবস্থা শক্তিশালীকরণ’ প্রকল্প হাতে নেয়। যেখানে নতুন করে দেশের ৫২টি জেলায় পানির গুণগতমান পরীক্ষাগার স্থাপনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল।

ইতোমধ্যে এ প্রকল্পের কাজ শেষ হয়েছে। অবকাঠামো স্থাপনার কাজ শেষ ছাড়াও সব ল্যাবরেটরিতে প্রয়োজনীয় আসবাবপত্র, কম্পিউটার, ফটোকপিয়ার এবং ল্যাবরেটরির ইকুইপমেন্ট সরবরাহ করা সম্পন্ন হয়েছে। ইতোমধ্যে যশোর, গোপালগঞ্জ, কক্সবাজারসহ কয়েকটি জেলায় নিকটবর্তী পরীক্ষাগারের জনবল দিয়ে পরীক্ষামূলকভাবে পানি পরীক্ষা কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এতে সাধারণ মানুষ পানি পরীক্ষা করে নিশ্চিত হয়ে বিশুদ্ধ পানি পান করতে পারছেন। ৫২ জেলায় জনবল নিয়োগের প্রক্রিয়ায়ও শেষ পর্যায়ে। এর মধ্য দিয়ে আগামী জুন মাসে পূর্ণাঙ্গভাবে একযোগে চালু করা হবে পানি পরীক্ষাগারগুলো।

এসব বিষয়ে প্রকল্প পরিচালক মুন্সি মোঃ হাচানুজ্জামান বলেন, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের লক্ষ্যে নিরাপদ পানি সরবরাহ নিশ্চিত করার জন্য জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের এ প্রকল্পটি দেশের জণগণের জন্য শতভাগ বিশুদ্ধ পানি নিশ্চিতকরণে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনবে। বাংলাদেশের পানির গুণগতমান পরীক্ষার জন্য যে সব ল্যাবরেটরি রয়েছে তার মধ্যে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের পরীক্ষাগারসমূহ অন্যতম। পানির গুণগতমান পরীক্ষার ব্যবস্থা শক্তিশালীকরণ প্রকল্পের আওতায় স্থাপিত ল্যাবরেটরিসমূহের মাধ্যমে সমগ্র বাংলাদেশে পানি পরীক্ষা করা হবে। এতে বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষ নিরাপদ এবং পরীক্ষিত বিশুদ্ধ পানি পান করতে পারবে। ফলে জনসাধারণ নানা ধরনের রোগ ব্যাধি থেকে রক্ষা পাবে।

তিনি আরো বলেন,প্রকল্পটির কাজ শেষ করতে নানা চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হয়েছে। জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর সব সময়ই সততা, নিষ্ঠা ও দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিয়ে কাজ করছে। প্রকল্পটির নির্মাণ সামগ্রী থেকে শুরু করে সরঞ্জাম সবকিছু পুঙ্খানুপুঙ্খুভাবে তদারক করা হয়েছে। অসাধু চক্র সিন্ডিকেটের মাধ্যমে নিম্ন মানের মালামাল সরবরাহের চেষ্টা করেছিল। তবে, প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের তৎপরতার কারণে তা সম্ভব হয়নি। এরপর একটি চক্র ক্ষুব্ধ হয়ে প্রকল্প পরিচালকের বিরুদ্ধে নানা অপপ্রচার চালিয়েছিলো। যা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও বিভ্রান্তমূলক।

মুন্সি মোঃ হাচানুজ্জামান বলেন,অসাধুচক্রের অপতৎপরতার বিষয়ে স্থানীয় সরকার বিভাগও অবহিত ছিল বিধায় দায়িত্বশীল মানদন্ড অনুযায়ী দক্ষতার সঙ্গেই প্রকল্পের কাজ শেষ করা হয়েছে।জনগণ এর সুফল পাওয়ার অপেক্ষায় রয়েছেন।