ঢাকা ১১:৪১ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৫ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে আশাবাদী আঠারো কোটি জনতা

নিজস্ব সংবাদ :

মো. বেল্লাল হাওলাদার

আওয়ামীলীগ সরকারের আমলে তাদের অনিয়ম, দুর্নীতি এবং ক্ষমতার অপব্যবহার নিয়ে বেশ কয়েকটি নিবন্ধন লিখেছিলাম গতবছরের ডিসেম্বরে, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ (ডামি) নির্বাচনকালীন সময়ে। যা বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় ও অনলাইন পোর্টালে সে সময় প্রকাশ পেয়েছিলো। যার কারণে এলাকার প্রভাবশালী আওয়ামীগের নেতাদের রোষানলে পড়েছিলাম আমি। এমনকি অনলাইনে প্রকাশ করায় ধ্রুববাণী অনলাইন পোর্টালের পেইজে অনেক রিপোর্ট করায় আমার লেখা ফেসবুক কর্তৃপক্ষ সরিয়ে ফেলে। এছাড়া আমার আইডিতে অনেক রিপোর্ট করেছিলো, যাতে আমার আইডি ডিজেবল হয়ে যায়, কিন্তু তারা সফল হয়নি। আমার লেখা অনলাইনে ভাসতে থাকে। সে-ই থেকে লেখালেখি থেকে কিছুটা দূরে ছিলাম, যদিও আমি ভীত বা চিন্তিত ছিলাম না। ভেবেছিলাম আর লিখবো না। কিন্তু গণঅভ্যুত্থানের পরে এবং আগে কিছু দৃশ্য দেখে বিবেকের তাড়নায় না লিখে আর পারলাম না।

সর্বান্তকরণে কোটা’র বিপক্ষে অবস্থান ছিল আমার, তাই ছাত্রদের আন্দোলনের পক্ষে ছিলাম। পেশাগত দায়িত্বে এই আন্দোলনের শুরু থেকে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সংবাদ সংগ্রহে মাঠে থেকেছি। সরকার পতনের পর আমি দেখেছি, কতিপয় সুযোগ সন্ধানী মানুষের সময়ের সাথে পরিবর্তন। সরকার পদত্যাগের ভেতর দিয়ে যে বৈপ্লবিক পরিবর্তনের সূচনা হলো তার সুফল নির্যাতিত, বঞ্চিত, হতাশাগ্রস্ত মানুষের ঘরে ঘরে মূহুর্তেই পৌঁছে গেলো। আগুন সন্ত্রাস, লুটপাট ভাংচুর, দখল ও পাল্টাদখলের প্রেক্ষাপট দেখেছি এবং শুনেছি, অনেক জায়গায় হয়েছে খুন-ডাকাতি। যে খবরগুলো ফলাও করে প্রকাশিত হয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে, জাতীয় দৈনিক ও ইলেকট্রনিক্স মিডিয়ায়।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার কোটা বিরোধী আন্দোলন সরকারের নানা কর্মকান্ড এবং বিরোধিতার প্রেক্ষাপটে আন্দোলনটি সরকার পতনের এক দফা দাবিতে পরিণত হয়। তখন আওয়ামী সরকারের পেটুয়া বাহিনীর সাঁড়াশি প্রতিরোধে আন্দোলন সহিংস রূপ নেয় এবং অনেকগুলো তাজা প্রাণ ঝরে যায়। এর ফলশ্রুতিতে বিক্ষুব্ধ ছাত্রজনতার রোষানলে পড়েন সাবেক প্রধানমন্ত্রী। অবশেষে ক্ষমতা ছেড়ে দেশ ত্যাগে বাধ্য হোন। তাঁরা প্রথমে ছাত্র-জনতার আন্দোলনকে অতোটা গুরুত্ব দেয়নি। ভেবেছিলো দীর্ঘ ১৬ বছর বিএনপিসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলের আন্দোলন যেমন সরকারের কিছুই করতে পারেনি, সেখানে সাধারণ ছাত্র-জনতা আর কি-বা করবে! যেমন এক সময় পাকিস্তানিরা মনে করতো বাঙালিরা কি করবে? এরা লুঙ্গি পরে হাঁটে, বিচিকলা, মরিচ ভেঁজে পেঁয়াজ দিয়ে খায় পান্তা ভাত। এদের শক্তি নেই বুদ্ধি নাই। কিন্তু পান্তা ভাত আর বিচিকলায় এতোটাই যে শক্তি আর এতো বুদ্ধি বৃদ্ধি পায় বাঙালির, তা বুঝে উঠতে পারেননি পাকি’রা। ঠিক তেমনি আওয়ামী লীগের নেতারা ছাত্রদের আন্দোলনের ততোটা গুরুত্ব দেননি। ভেবেছিলো ছাত্ররা অল্প বয়সী, থাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের হোটেল ক্যাম্পাসে। সেখানে থেকে রাজনৈতিক যে কৌশল তা বুঝবে কি করে? এরা রাজনৈতিক লোক নয়, রাজনীতির কি বুঝবে? সরকারের সাথে কি করে পারবে? আমাদের আছে প্রশাসন, দলীয় লোকজন, ছাত্রলীগ যুবলীগ কৃষকলীগ আরো কত কতো লীগ! এটা ভেবে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করে ছাত্র-জনতাকে। তাদের দমন করতে আশ্রয় নেয় বিভিন্ন কূটকৌশলের।

এটা ভাবেনি যে, ছাত্ররা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসের হোটেলে থাকলেও তারা চর্চা করেন এবং সুশীল, গবেষক এবং রাজনীতিবিদদের সাপোর্ট পরামর্শ আছে তাঁদের সাথে। কি দুর্ভাগ্যজনক পরিণতি, অবশেষে ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার দুই ঘন্টার গণঅভ্যুত্থানে ক্ষমতা ছেড়ে দেশ ত্যাগের এক ঘন্টা আগেও ভাবেননি যে ছাত্রজনতার এই গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনাকে দেশ ছেড়ে পালাতে হবে। যার কারণে প্রতিদিনের ন্যায় দুপুরেও শাহী খাবার রান্নাবান্না হয়েছিলো গণভবনে। কি আফসোস দুপুরের সেই শাহী খাবারও খেয়ে যেতে পারেননি তিনি। তা দেখা গেছে গণভবনে প্রবেশ করা অভ্যুত্থানকারীদের পেটচর্চার ভিডিও মারফত, যারা কোনোদিন যা ভাবেনি যে, স্বয়ং আল্লাহই তাদের জন্য লিখে রেখেছিলেন বলে তারা খেয়েছেন। এমন একটি দিন আসবে যা কখনোই ভাবেনি আওয়ামীলীগ ও সরকার। এমনকি গণভবনে দামি দামি আসবাবপত্র টাকা পয়সা, শেখ হাসিনার শাড়ি ব্লাউজ যে যেভাবে পেরেছে নিয়েছে উৎসুক জনতা। এমনকি তাঁর অন্তর্বাস নিয়ে উৎসুক জনতাকে উল্লাস করতে দেখা গেছে! সে দৃশ্য দেখে সারা পৃথিবীর মানুষ লজ্জাবোধ করেছেন, ঘৃণায় চোখ বুজেছেন। এটা না করলেও তারা পারতেন। তবে এটা হয়তো, আওয়ামীলীগের অতীত অপশাসনে বিক্ষুদ্ধ জনতার রোষানল। আসলে হাসিনা সরকার দীর্ঘ ১৫/১৬ বছর ক্ষমতায় থেকে যেমন দেশকে উন্নয়নের রোলমডেল হিসাবে বহির্বিশ্বে বাংলাদেশকে পরিচিত করতে সমর্থ হয়েছেন। তার সাথে গত কিছুদিন যাবৎ রাষ্ট্রের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং তাঁর মন্ত্রী পরিষদের সদস্যবর্গ, উপদেষ্টা মন্ডলী ও নেতাদের মেগা দুর্নীতির খবরও দেশ তথা দেশের বাইরে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। নেতারা দুর্নীতি করে যেভাবে দেশের সম্পদ লুটপাট ও ক্ষমতার অপব্যবহার করে নানান অপরাধ করেছে যা দৃশ্যমান। সেগুলো অস্বীকার করবার কোনো উপায় নেই। সেখানে দরকার ছিলো দুর্নীতিবাজদের টুঁটি চেপে ধরা। যা করতে শেখ হাসিনা সম্পুর্ণ ব্যর্থ হয়েছেন।

গত ২ জুন ২০২৪ একটি নিবন্ধ লেখেছিলাম ‘অপরাধ দুর্নীতির কারণে দেশের সব অর্জন ম্লান হচ্ছে’ শিরোনামে। লেখাটি দৈনিক বাংলাদেশ সমাচার ছাড়াও বেশ কয়েকটি দৈনিক জাতীয় পত্রিকা ও বাংলাভিশন অনলাইনে প্রকাশ হয়েছে। সেখানে তুলে ধরেছিলাম আওয়ামী সরকারের অন্যায় অপরাধ দুর্নীতির কথা। বলার অপেক্ষা রাখে না; মাঠ প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তাদের নেতৃত্ব অনুকূলে থাকা না থাকার ওপর একটি সরকারের সাফল্য-ব্যর্থতা অনেকখানি নির্ভরশীল হয়ে থাকে। আওয়ামী সরকার প্রশাসনের সাপোর্টের ফলে ছলে-বলে-কৌশলে লাগাতার ১৬ বছর শাসনক্ষমতা আঁকড়ে থাকার সৌভাগ্য হয়েছে। যার কারণে সরকার তাদের পিছনের কৃতকর্ম এতোটাই বাজে ছিলো যে, তা মানুষের ধৈর্যের সীমা ছাড়িয়ে গেছে। এতে মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে আল্লাহর দরবারে অভিশাপ দিয়েছে। অসংখ্য ভুক্তভোগীর অভিশাপ আর বোবা কান্নায় আল্লাহর তরফ থেকে গজব নাযিল হয়েছে। এটা ঠিক যে ক্ষমতাধরদের অত্যাচারে যখন মানুষ অসহায় হয়ে পড়ে, তখন আল্লাহ ছাড়া কোনো উপায় থাকে না, তখনই মানুষ অভিশাপ দেয়। এরই ফলশ্রুতিতে নির্বিষ কোটা আন্দোলন সরকার পতন তথা শেখ হাসিনার পতন হয়েছে। কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হওয়ার পর যে সব ঘটনা ঘটেছে, তা অত্যন্ত লজ্জার বিষয়। যারা এই নিন্দনীয় কাজগুলা করেছেন, আমি মনে করি তারা ছাত্র নয়। ছাত্ররা সাম্যতা চেয়েছেন, তারা তাদের অধিকার চেয়েছেন, দেশকে সুশৃংখল, দুর্নীতি মুক্ত করবার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু দেখা গেছে ছাত্রদের ভিতরে কিছু অছাত্র ঢুকে তাদের যে অর্জন, তাকে নস্যাৎ করার জন্য দ্বিতীয় পক্ষ ঢুকে পড়েছে। এরা কারা.? এদের অবশ্যই চিহ্নিত করা দরকার। যেমন শেখ হাসিনা সরকারের সকল দুর্নীতিবাজ অন্যায়কারীদের বিচার হওয়া দরকার, তেমনি আজ দেশকে যারা অরাজকতার দিকে ঠেলে দিচ্ছে লুটপাট ভাংচুর দখল বাণিজ্য করছে, তাদেরও কঠিন বিচারের আওতায় নিয়ে আসা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে সময়ের দাবি।

এতো বড় একটি বৃহত্তর রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ১৬ বছর ক্ষমতায় থাকার পরেও আজ মাঠ ছেড়ে পালিয়েছে। তবে ১৫ আগস্টকে কেন্দ্র করে নিজেদের উপস্থিতি জানান দেয়ার চেষ্টা করেছিলেন। দিয়েছিল শোক দিবসের কর্মসূচি পালনের ইঙ্গিত। তবে গোপালগঞ্জ ছাড়া কোথাও পালন করতে পারেনি, তারা চেষ্টা করেছিলেন সেক্ষেত্রে ব্যর্থ হয়েছে। এখন প্রশ্ন আসে আওয়ামী লীগের ১৬ বছরের ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় কেন্দ্রীয়, জেলা উপজেলাসহ মাঠ পর্যায়ে এতো নেতা দেখা গেছে যা হিসেবে ছাড়া, আজ তারা কোথায়.? তাদের আত্মগোপনে চলে যাওয়ায় সাধারণ যারা আওয়ামী লীগের সমর্থক তারা আজ ক্ষুব্ধ। দিশেহারা হয়ে ক্ষোভে দুঃখে নেতাদের উপর থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে। এখন বলা যায়, এই আওয়ামী লীগ কি বঙ্গবন্ধুর সেই আওয়ামী লীগ.? মনে হচ্ছে বঙ্গবন্ধুর নাম ব্যবহার করে এ-আওয়ামী লীগ হয়েছে চেটে খাওয়া দূর্নীতিবাজ মানুষের আওয়ামীলীগ। এই চেটে খাওয়া মানুষ কিভাবে তারা পালন করবে বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুবার্ষিকী.? তারা বিগত দিনে যে কাজগুলো করেছে তা সীমা লংঘন বলে বিবেচিত হয়েছে, জনগণ তথা বর্তমান প্রশাসন সর্বোপরে আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া ছাত্রজনতার কাছে। অবশ্যই তারা সীমা লংঘন করেছে। আর সীমা লংঘনকারীর প্রতি মহান আল্লাহর তরফ থেকে গজব নাজিল হয়। কথায় বলে, ‘যে যেমন কর্ম করবে সে তেমনি ফল ভোগ করবে।’ এটাই তার নমুনা।

ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে পোড়া গন্ধ ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বাতাসে ছড়িয়ে পড়েছে। জানি শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সাবেক সরকার গুলি করে যে ছাত্র-জনতাকে মেরেছে, সেই প্রাণগুলোর তুলনায় বঙ্গবন্ধুর ওই বাড়িটি কিছুই না। ফলাও ভাবে বলা হচ্ছে যে, দেশ স্বাধীন হয়েছে বা স্বাধীন করেছে ছাত্রজনতার অভ্যুত্থান। তো স্বাধীন দেশের মানচিত্র কি এমন হওয়া উচিত.? ১৯৭১ সালে যখন দেশ স্বাধীন হলো, তখন তো আমাদের জন্ম হয়নি, আমরা দেখিনি তবে শুনেছি মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে স্বাধীনতার অনেক গল্পকাহিনী। ৭১ সালে স্বাধীনের পরে এভাবে বাড়ি বাড়ি ভাঙচুর, হত্যাকান্ড, দখল, ভাগাভাগি ও লাঞ্ছনার মত ঘটনা ঘটেনি। তাহলে দ্বিতীয় স্বাধীনতায় কেনো এমনটা হচ্ছে.? প্রশ্ন থেকে যায়। আমি মনে করি বঙ্গবন্ধু মানেই একটি দেশ, তিনি আওয়ামী লীগের নয়, তিনি গোটা দেশের মানুষের। তবে এই মহান মানুষটিকে আওয়ামী লীগ ও তাঁর কন্যা শেখ হাসিনা সার্বজনীন করতে পারেননি। দলীয়করণে আবদ্ধ করে রেখেছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে। মনে রাখতে হবে, বাঙালিরা তাঁর নেতৃত্বে এই দেশ স্বাধীন করেছে। তিনি নেতৃত্ব দিয়েছিলেন ধানমন্ডির ৩২ নম্বর এই বাড়ি থেকে। ওই বাড়িতে ১৯৭৫ এর ১৫ আগস্ট নির্মমভাবে ঘাতকের বুলেটের গুলিতে সপরিবারে নির্মমভাবে নিহত হন বঙ্গবন্ধু। সে হিসেবে ওই বাড়ি বাংলাদেশের প্রতীক বলা যায়। কেন ওই বাড়িতে বারবার আঘাত করতে হবে? যে আদর্শ বঙ্গবন্ধু এই দেশের প্রতিটি মানুষের হৃদয়ে গেঁথে দিয়েছিলেন, সেই আদর্শ মুছে ফেলা অত সহজ.?

কেমন অদ্ভুত লাগছে! ১৫ আগষ্ট রাজধানীর ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি মুজিবপ্রেমিদের শ্রদ্ধা জানাতে গিয়ে একদল যুবকের হাতে অনেকেই লাঞ্ছণা ও হেনস্তার শিকার হয়েছেন। তাদের মারধর, নারীদের গায়ে হাত তোলা, বিবস্ত্র করে লাঞ্ছণা করা, কান ধরে উঠবস করানো, সাংবাদিকদের উপরে হামলাসহ বিভিন্ন অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার দৃশ্য অনলাইনে ভেসে বেড়াচ্ছে! যা দেখতে লাগছিলো কুৎসিত ও অশ্লীল। বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীর গাড়িও ভাঙচুর করা হয়েছে, তাকেও বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানাতে দেওয়া হয়নি। তিনি বারবার বলেছেন, বঙ্গবন্ধু আর শেখ হাসিনা এক নয়, শেখ হাসিনা আর মুক্তিযুদ্ধ এক নয়। কথাগুলো তিনি যথার্থ বলেছেন। আমিও উনার বক্তব্য মনেপ্রাণে বিশ্বাস করি। তাঁর কথার প্রমাণ মিলেছে শেখ হাসিনা সরকারের দীর্ঘ ১৫-১৬ বছরের দেশ পরিচালনায়। একজন প্রধানমন্ত্রী যদি ৪০০ কোটি টাকা মেরে দেওয়ার পরও তার পিয়নকে না ধরে মিডিয়ার সামনে বলে তাঁর পিয়নের দুর্নীতির কথা! এছাড়াও তাঁর আশেপাশে থাকা দরবেশদের মত লোকের দুর্নীতি সহ আরো অনেকের দুর্ণীতি ছিলো আকাশচুম্বী! সেগুলো কি করে ধরবেন? দুর্নীতিবাজদের চারপাশে বসার সুযোগ করে দিয়েছেন স্বয়ং শেখ হাসিনা নিজেই। এমনকি যাদের উপদেশে তিনি চলতেন তাদের সাথে বঙ্গবন্ধুর তুলনা করা সমীচীন নয়।

বলা বাহুল্য প্রধানমন্ত্রী পদ এর চেয়ে কঠিন আরো যে যে দায়িত্ব পালন করার কথা ছিলো, সেগুলো কি তিনি ঠিকমতো করতে পেরেছেন? এই প্রশ্ন স্বাভাবিকভাবে এসে যায়। আফসোস লাগছে আজ, কীভাবে বঙ্গবন্ধুর নিজ হাতে গড়া ছাত্রলীগ, আপাদমস্তক একটি সন্ত্রাসী সংগঠনে পরিণত হলো? যে দল কয়েক দশক পর যুদ্ধাপরাধের বিচার করে আমাদের কলঙ্কমুক্ত করলো, সেই দলই বা কী করে আয়নাঘরে বিনা বিচারে মানুষকে আটকে রাখে? বিএনপির আমলে যেমন হাওয়া ভবন সৃষ্টি করে ব্যাপক সমালোচিত হয়েছিল, তেমনি আওয়ামীলীগ-ও আয়নাঘর তৈরি করে গুম খুনসহ নানা অপকর্মের কথা বেড়িয়ে আসছে। আসলে এদের বঙ্গবন্ধুর নীতি-আদর্শ ছিলো শুধু মুখেমুখে, কাজে কর্মে মোটেও প্রকাশ পায়নি, যা আজ স্পষ্ট হয়েছে দেশবাসীর কাছে।

ধানমন্ডির ঘটনায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মীদের জড়িত থাকার অভিযোগও আনেন কেউ কেউ। অবশ্য এ ঘটনার সঙ্গে কোনো সমন্বয়ক বা সহ-সমন্বয়ক জড়িত থাকলে তাদেরকে বহিষ্কার করা হবে বলেও জানিয়েছেন অন্যতম সমন্বয়ক সারজিস আলম। আমি মনে করি, অতি উৎসাহী এরা প্রকৃত অর্থে ছাত্র নয়, ছাত্রের লেবাসে কতিপয় সুবিধাবাদী দুষ্ট প্রকৃতির লোক এই ন্যাক্কারজনক কর্মকাণ্ড ঘটিয়েছেন। এরা এখনও থেমে নেই। সুযোগ বুঝে দুষ্কৃতিকারীরা সারাদেশে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান দখল, ভাগাভাগি, মারামারিতে ভীষণ ব্যস্ত! সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকারেরও সময় লাগছে সবকিছু গুছিয়ে নিতে। মাঠে আগের মতো প্রশাসনের ভালো ভূমিকা না থাকায় যে যেভাবে পারছে নিজের সর্বোচ্চ শক্তি প্রয়োগ করে ভিন্ন মতাবলম্বীদের হেনস্তা করছে! প্রশাসনের উচিত এদিকে নজর দেওয়া এবং যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা। এতে সবার মাঝে আস্থা ফিরে আসবে। এখানে উল্লেখ্য যে, কেউ যদি অপরাধী হোন তাহলে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণেও শিথিলতা অগ্রহণযোগ্য, এটিই সচেতন নাগরিকদের চাওয়া।

গতবছরের নভেম্বর ৭ তারিখে একটি নিবন্ধে লিখেছিলাম, ‘কি হবে জয় বাংলার স্লোগান দিয়ে, যদি বঙ্গবন্ধুর নীতি-আদর্শ না থাকে হৃদপিণ্ডে।’ যা আজ বাস্তবতার সাথে হুবহু মিল পাওয়া যাচ্ছে। এখানে লক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে, মানুষ এখন আওয়ামী লীগ দেখলেই স্লোগান দেয়ৎ‘ভুয়া ভুয়া বলে ’আসলে এরা কী ভুয়া লীগ? সরকারের দেশ চালাতে সর্বাগ্রে প্রয়োজন একটি নিরপেক্ষ, নিবেদিতপ্রাণ, নির্লোভ মাঠ প্রশাসনের। কিন্তু বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে আমরা কী দেখতে পেলাম? সবক্ষেত্রে দলীয়করণ। মাঠ পর্যায়ের নেতাও ছিল বেপরোয়া। যে যেমন পেরেছেন খেয়েছেন লুটপাট করে। এদেশের যতোই উন্নয়নের কথা বলা হোক, এই উন্নয়ন কর্মকান্ডে শেখ হাসিনা বা তাঁর দলের দুর্নীতিবাজ শীর্ষ নেতাদের বাঁচাতে পারবে বলে মনে হয় না। যে ভুল করেছে যেভাবে অন্যায়, দুর্নীতি, খুন করেছে। তাতে পূর্বের ন্যায় আওয়ামী লীগকে ফিরে আসতে নেতাদের কতো জেল জুলুম অত্যাচার নির্যাতন ভোগ করতে হবে, তা কেবল সৃষ্টিকর্তাই জানেন। একসময় দেশের প্রতিটি মানুষের হৃদস্পন্দনে যে দলের নাম ছিল, কেন সেই দলটি ঘুণাক্ষরেও টের পেলো না যে দেশের মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে তাদের কোনো যোগাযোগ নেই?

গণঅভ্যুত্থানের পরেও আন্দোলন থেমে নেই। বিভিন্ন ইস্যুতে আন্দোলন চলছেই। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বিগত দিনের সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত চাকুরীজীবীরা তাঁদের দাবি আদায়ে ঢাকার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে অবস্থান করছে। এতে সাধারণ মানুষের চলাচলে ভোগান্তি চরমে। গতকাল মতিঝিল থেকে আগারগাঁও যেতে আমার মোটরবাইকে সময় লেগেছে দু’ঘন্টা। তা-ও ঘুরে যেতে হয়েছে মগবাজার ফ্লাইওভার হয়ে। যেতে যেতে পথে দেখলাম, প্রেসক্লাবের সামনে গ্রামপুলিশের বিশাল মানববন্ধন। তাদেরও একদফা দাবি। আরো দেখলাম আগারগাঁও থেকে বিজয় সরণি পর্যন্ত দীর্ঘ লাইন মানববন্ধনের। এভাবে প্রতিদিন অনেক দাবি-দাওয়া নিয়ে রাস্তায় বের হচ্ছে অনেক মানুষ। কিন্তু এই মুহূর্তে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সামনে এমন দাবি দাওয়া কতোটা যৌক্তিক, তাও ভেবে দেখবার আহ্বান জানাচ্ছি। সাথে যৌক্তিক দাবির প্রতি সহানুভূতিশীল আচরণও জরুরি। সার্বিক বিষয় নিয়ে বর্তমান সরকারকে অনেকটা চ্যালেঞ্জ নিতে হবে। তারা কী পারবে এই বঞ্চিত অবহেলিত মানুষের দাবিগুলো পূরণ করতে! কোটাবিরোধী আন্দোলনে মানুষের প্রাণহানির পাশাপাশি দেশের সম্পদের যে পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, তা ঠিকঠাক করতে অনেক সময় লেগে যাবে। এমনিতেই নানা সংকটে ভুগছে সদ্য গণঅভ্যুত্থানে নতুন রূপ পাওয়া দেশে। তারপরেও অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে অনেক আশা আকাঙ্ক্ষা আছে সাধারণ মানুষের। জানি না পরিবর্তনের সঠিক লক্ষ্য অর্জিত হবে কি না! তবুও আশায় চেয়ে আছি, ভালো কিছু হবে আসছে সময়ে, আশাবাদী আঠারো কোটি জনতা।

লেখক : কবি, কলামিস্ট ও সাংবাদিক

ট্যাগস :

নিউজটি শেয়ার করুন

আপডেট সময় ০৭:৩৭:১২ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৯ অগাস্ট ২০২৪
৮৮ বার পড়া হয়েছে

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে আশাবাদী আঠারো কোটি জনতা

আপডেট সময় ০৭:৩৭:১২ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৯ অগাস্ট ২০২৪

মো. বেল্লাল হাওলাদার

আওয়ামীলীগ সরকারের আমলে তাদের অনিয়ম, দুর্নীতি এবং ক্ষমতার অপব্যবহার নিয়ে বেশ কয়েকটি নিবন্ধন লিখেছিলাম গতবছরের ডিসেম্বরে, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ (ডামি) নির্বাচনকালীন সময়ে। যা বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় ও অনলাইন পোর্টালে সে সময় প্রকাশ পেয়েছিলো। যার কারণে এলাকার প্রভাবশালী আওয়ামীগের নেতাদের রোষানলে পড়েছিলাম আমি। এমনকি অনলাইনে প্রকাশ করায় ধ্রুববাণী অনলাইন পোর্টালের পেইজে অনেক রিপোর্ট করায় আমার লেখা ফেসবুক কর্তৃপক্ষ সরিয়ে ফেলে। এছাড়া আমার আইডিতে অনেক রিপোর্ট করেছিলো, যাতে আমার আইডি ডিজেবল হয়ে যায়, কিন্তু তারা সফল হয়নি। আমার লেখা অনলাইনে ভাসতে থাকে। সে-ই থেকে লেখালেখি থেকে কিছুটা দূরে ছিলাম, যদিও আমি ভীত বা চিন্তিত ছিলাম না। ভেবেছিলাম আর লিখবো না। কিন্তু গণঅভ্যুত্থানের পরে এবং আগে কিছু দৃশ্য দেখে বিবেকের তাড়নায় না লিখে আর পারলাম না।

সর্বান্তকরণে কোটা’র বিপক্ষে অবস্থান ছিল আমার, তাই ছাত্রদের আন্দোলনের পক্ষে ছিলাম। পেশাগত দায়িত্বে এই আন্দোলনের শুরু থেকে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সংবাদ সংগ্রহে মাঠে থেকেছি। সরকার পতনের পর আমি দেখেছি, কতিপয় সুযোগ সন্ধানী মানুষের সময়ের সাথে পরিবর্তন। সরকার পদত্যাগের ভেতর দিয়ে যে বৈপ্লবিক পরিবর্তনের সূচনা হলো তার সুফল নির্যাতিত, বঞ্চিত, হতাশাগ্রস্ত মানুষের ঘরে ঘরে মূহুর্তেই পৌঁছে গেলো। আগুন সন্ত্রাস, লুটপাট ভাংচুর, দখল ও পাল্টাদখলের প্রেক্ষাপট দেখেছি এবং শুনেছি, অনেক জায়গায় হয়েছে খুন-ডাকাতি। যে খবরগুলো ফলাও করে প্রকাশিত হয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে, জাতীয় দৈনিক ও ইলেকট্রনিক্স মিডিয়ায়।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার কোটা বিরোধী আন্দোলন সরকারের নানা কর্মকান্ড এবং বিরোধিতার প্রেক্ষাপটে আন্দোলনটি সরকার পতনের এক দফা দাবিতে পরিণত হয়। তখন আওয়ামী সরকারের পেটুয়া বাহিনীর সাঁড়াশি প্রতিরোধে আন্দোলন সহিংস রূপ নেয় এবং অনেকগুলো তাজা প্রাণ ঝরে যায়। এর ফলশ্রুতিতে বিক্ষুব্ধ ছাত্রজনতার রোষানলে পড়েন সাবেক প্রধানমন্ত্রী। অবশেষে ক্ষমতা ছেড়ে দেশ ত্যাগে বাধ্য হোন। তাঁরা প্রথমে ছাত্র-জনতার আন্দোলনকে অতোটা গুরুত্ব দেয়নি। ভেবেছিলো দীর্ঘ ১৬ বছর বিএনপিসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলের আন্দোলন যেমন সরকারের কিছুই করতে পারেনি, সেখানে সাধারণ ছাত্র-জনতা আর কি-বা করবে! যেমন এক সময় পাকিস্তানিরা মনে করতো বাঙালিরা কি করবে? এরা লুঙ্গি পরে হাঁটে, বিচিকলা, মরিচ ভেঁজে পেঁয়াজ দিয়ে খায় পান্তা ভাত। এদের শক্তি নেই বুদ্ধি নাই। কিন্তু পান্তা ভাত আর বিচিকলায় এতোটাই যে শক্তি আর এতো বুদ্ধি বৃদ্ধি পায় বাঙালির, তা বুঝে উঠতে পারেননি পাকি’রা। ঠিক তেমনি আওয়ামী লীগের নেতারা ছাত্রদের আন্দোলনের ততোটা গুরুত্ব দেননি। ভেবেছিলো ছাত্ররা অল্প বয়সী, থাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের হোটেল ক্যাম্পাসে। সেখানে থেকে রাজনৈতিক যে কৌশল তা বুঝবে কি করে? এরা রাজনৈতিক লোক নয়, রাজনীতির কি বুঝবে? সরকারের সাথে কি করে পারবে? আমাদের আছে প্রশাসন, দলীয় লোকজন, ছাত্রলীগ যুবলীগ কৃষকলীগ আরো কত কতো লীগ! এটা ভেবে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করে ছাত্র-জনতাকে। তাদের দমন করতে আশ্রয় নেয় বিভিন্ন কূটকৌশলের।

এটা ভাবেনি যে, ছাত্ররা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসের হোটেলে থাকলেও তারা চর্চা করেন এবং সুশীল, গবেষক এবং রাজনীতিবিদদের সাপোর্ট পরামর্শ আছে তাঁদের সাথে। কি দুর্ভাগ্যজনক পরিণতি, অবশেষে ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার দুই ঘন্টার গণঅভ্যুত্থানে ক্ষমতা ছেড়ে দেশ ত্যাগের এক ঘন্টা আগেও ভাবেননি যে ছাত্রজনতার এই গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনাকে দেশ ছেড়ে পালাতে হবে। যার কারণে প্রতিদিনের ন্যায় দুপুরেও শাহী খাবার রান্নাবান্না হয়েছিলো গণভবনে। কি আফসোস দুপুরের সেই শাহী খাবারও খেয়ে যেতে পারেননি তিনি। তা দেখা গেছে গণভবনে প্রবেশ করা অভ্যুত্থানকারীদের পেটচর্চার ভিডিও মারফত, যারা কোনোদিন যা ভাবেনি যে, স্বয়ং আল্লাহই তাদের জন্য লিখে রেখেছিলেন বলে তারা খেয়েছেন। এমন একটি দিন আসবে যা কখনোই ভাবেনি আওয়ামীলীগ ও সরকার। এমনকি গণভবনে দামি দামি আসবাবপত্র টাকা পয়সা, শেখ হাসিনার শাড়ি ব্লাউজ যে যেভাবে পেরেছে নিয়েছে উৎসুক জনতা। এমনকি তাঁর অন্তর্বাস নিয়ে উৎসুক জনতাকে উল্লাস করতে দেখা গেছে! সে দৃশ্য দেখে সারা পৃথিবীর মানুষ লজ্জাবোধ করেছেন, ঘৃণায় চোখ বুজেছেন। এটা না করলেও তারা পারতেন। তবে এটা হয়তো, আওয়ামীলীগের অতীত অপশাসনে বিক্ষুদ্ধ জনতার রোষানল। আসলে হাসিনা সরকার দীর্ঘ ১৫/১৬ বছর ক্ষমতায় থেকে যেমন দেশকে উন্নয়নের রোলমডেল হিসাবে বহির্বিশ্বে বাংলাদেশকে পরিচিত করতে সমর্থ হয়েছেন। তার সাথে গত কিছুদিন যাবৎ রাষ্ট্রের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং তাঁর মন্ত্রী পরিষদের সদস্যবর্গ, উপদেষ্টা মন্ডলী ও নেতাদের মেগা দুর্নীতির খবরও দেশ তথা দেশের বাইরে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। নেতারা দুর্নীতি করে যেভাবে দেশের সম্পদ লুটপাট ও ক্ষমতার অপব্যবহার করে নানান অপরাধ করেছে যা দৃশ্যমান। সেগুলো অস্বীকার করবার কোনো উপায় নেই। সেখানে দরকার ছিলো দুর্নীতিবাজদের টুঁটি চেপে ধরা। যা করতে শেখ হাসিনা সম্পুর্ণ ব্যর্থ হয়েছেন।

গত ২ জুন ২০২৪ একটি নিবন্ধ লেখেছিলাম ‘অপরাধ দুর্নীতির কারণে দেশের সব অর্জন ম্লান হচ্ছে’ শিরোনামে। লেখাটি দৈনিক বাংলাদেশ সমাচার ছাড়াও বেশ কয়েকটি দৈনিক জাতীয় পত্রিকা ও বাংলাভিশন অনলাইনে প্রকাশ হয়েছে। সেখানে তুলে ধরেছিলাম আওয়ামী সরকারের অন্যায় অপরাধ দুর্নীতির কথা। বলার অপেক্ষা রাখে না; মাঠ প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তাদের নেতৃত্ব অনুকূলে থাকা না থাকার ওপর একটি সরকারের সাফল্য-ব্যর্থতা অনেকখানি নির্ভরশীল হয়ে থাকে। আওয়ামী সরকার প্রশাসনের সাপোর্টের ফলে ছলে-বলে-কৌশলে লাগাতার ১৬ বছর শাসনক্ষমতা আঁকড়ে থাকার সৌভাগ্য হয়েছে। যার কারণে সরকার তাদের পিছনের কৃতকর্ম এতোটাই বাজে ছিলো যে, তা মানুষের ধৈর্যের সীমা ছাড়িয়ে গেছে। এতে মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে আল্লাহর দরবারে অভিশাপ দিয়েছে। অসংখ্য ভুক্তভোগীর অভিশাপ আর বোবা কান্নায় আল্লাহর তরফ থেকে গজব নাযিল হয়েছে। এটা ঠিক যে ক্ষমতাধরদের অত্যাচারে যখন মানুষ অসহায় হয়ে পড়ে, তখন আল্লাহ ছাড়া কোনো উপায় থাকে না, তখনই মানুষ অভিশাপ দেয়। এরই ফলশ্রুতিতে নির্বিষ কোটা আন্দোলন সরকার পতন তথা শেখ হাসিনার পতন হয়েছে। কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হওয়ার পর যে সব ঘটনা ঘটেছে, তা অত্যন্ত লজ্জার বিষয়। যারা এই নিন্দনীয় কাজগুলা করেছেন, আমি মনে করি তারা ছাত্র নয়। ছাত্ররা সাম্যতা চেয়েছেন, তারা তাদের অধিকার চেয়েছেন, দেশকে সুশৃংখল, দুর্নীতি মুক্ত করবার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু দেখা গেছে ছাত্রদের ভিতরে কিছু অছাত্র ঢুকে তাদের যে অর্জন, তাকে নস্যাৎ করার জন্য দ্বিতীয় পক্ষ ঢুকে পড়েছে। এরা কারা.? এদের অবশ্যই চিহ্নিত করা দরকার। যেমন শেখ হাসিনা সরকারের সকল দুর্নীতিবাজ অন্যায়কারীদের বিচার হওয়া দরকার, তেমনি আজ দেশকে যারা অরাজকতার দিকে ঠেলে দিচ্ছে লুটপাট ভাংচুর দখল বাণিজ্য করছে, তাদেরও কঠিন বিচারের আওতায় নিয়ে আসা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে সময়ের দাবি।

এতো বড় একটি বৃহত্তর রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ১৬ বছর ক্ষমতায় থাকার পরেও আজ মাঠ ছেড়ে পালিয়েছে। তবে ১৫ আগস্টকে কেন্দ্র করে নিজেদের উপস্থিতি জানান দেয়ার চেষ্টা করেছিলেন। দিয়েছিল শোক দিবসের কর্মসূচি পালনের ইঙ্গিত। তবে গোপালগঞ্জ ছাড়া কোথাও পালন করতে পারেনি, তারা চেষ্টা করেছিলেন সেক্ষেত্রে ব্যর্থ হয়েছে। এখন প্রশ্ন আসে আওয়ামী লীগের ১৬ বছরের ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় কেন্দ্রীয়, জেলা উপজেলাসহ মাঠ পর্যায়ে এতো নেতা দেখা গেছে যা হিসেবে ছাড়া, আজ তারা কোথায়.? তাদের আত্মগোপনে চলে যাওয়ায় সাধারণ যারা আওয়ামী লীগের সমর্থক তারা আজ ক্ষুব্ধ। দিশেহারা হয়ে ক্ষোভে দুঃখে নেতাদের উপর থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে। এখন বলা যায়, এই আওয়ামী লীগ কি বঙ্গবন্ধুর সেই আওয়ামী লীগ.? মনে হচ্ছে বঙ্গবন্ধুর নাম ব্যবহার করে এ-আওয়ামী লীগ হয়েছে চেটে খাওয়া দূর্নীতিবাজ মানুষের আওয়ামীলীগ। এই চেটে খাওয়া মানুষ কিভাবে তারা পালন করবে বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুবার্ষিকী.? তারা বিগত দিনে যে কাজগুলো করেছে তা সীমা লংঘন বলে বিবেচিত হয়েছে, জনগণ তথা বর্তমান প্রশাসন সর্বোপরে আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া ছাত্রজনতার কাছে। অবশ্যই তারা সীমা লংঘন করেছে। আর সীমা লংঘনকারীর প্রতি মহান আল্লাহর তরফ থেকে গজব নাজিল হয়। কথায় বলে, ‘যে যেমন কর্ম করবে সে তেমনি ফল ভোগ করবে।’ এটাই তার নমুনা।

ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে পোড়া গন্ধ ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বাতাসে ছড়িয়ে পড়েছে। জানি শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সাবেক সরকার গুলি করে যে ছাত্র-জনতাকে মেরেছে, সেই প্রাণগুলোর তুলনায় বঙ্গবন্ধুর ওই বাড়িটি কিছুই না। ফলাও ভাবে বলা হচ্ছে যে, দেশ স্বাধীন হয়েছে বা স্বাধীন করেছে ছাত্রজনতার অভ্যুত্থান। তো স্বাধীন দেশের মানচিত্র কি এমন হওয়া উচিত.? ১৯৭১ সালে যখন দেশ স্বাধীন হলো, তখন তো আমাদের জন্ম হয়নি, আমরা দেখিনি তবে শুনেছি মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে স্বাধীনতার অনেক গল্পকাহিনী। ৭১ সালে স্বাধীনের পরে এভাবে বাড়ি বাড়ি ভাঙচুর, হত্যাকান্ড, দখল, ভাগাভাগি ও লাঞ্ছনার মত ঘটনা ঘটেনি। তাহলে দ্বিতীয় স্বাধীনতায় কেনো এমনটা হচ্ছে.? প্রশ্ন থেকে যায়। আমি মনে করি বঙ্গবন্ধু মানেই একটি দেশ, তিনি আওয়ামী লীগের নয়, তিনি গোটা দেশের মানুষের। তবে এই মহান মানুষটিকে আওয়ামী লীগ ও তাঁর কন্যা শেখ হাসিনা সার্বজনীন করতে পারেননি। দলীয়করণে আবদ্ধ করে রেখেছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে। মনে রাখতে হবে, বাঙালিরা তাঁর নেতৃত্বে এই দেশ স্বাধীন করেছে। তিনি নেতৃত্ব দিয়েছিলেন ধানমন্ডির ৩২ নম্বর এই বাড়ি থেকে। ওই বাড়িতে ১৯৭৫ এর ১৫ আগস্ট নির্মমভাবে ঘাতকের বুলেটের গুলিতে সপরিবারে নির্মমভাবে নিহত হন বঙ্গবন্ধু। সে হিসেবে ওই বাড়ি বাংলাদেশের প্রতীক বলা যায়। কেন ওই বাড়িতে বারবার আঘাত করতে হবে? যে আদর্শ বঙ্গবন্ধু এই দেশের প্রতিটি মানুষের হৃদয়ে গেঁথে দিয়েছিলেন, সেই আদর্শ মুছে ফেলা অত সহজ.?

কেমন অদ্ভুত লাগছে! ১৫ আগষ্ট রাজধানীর ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি মুজিবপ্রেমিদের শ্রদ্ধা জানাতে গিয়ে একদল যুবকের হাতে অনেকেই লাঞ্ছণা ও হেনস্তার শিকার হয়েছেন। তাদের মারধর, নারীদের গায়ে হাত তোলা, বিবস্ত্র করে লাঞ্ছণা করা, কান ধরে উঠবস করানো, সাংবাদিকদের উপরে হামলাসহ বিভিন্ন অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার দৃশ্য অনলাইনে ভেসে বেড়াচ্ছে! যা দেখতে লাগছিলো কুৎসিত ও অশ্লীল। বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীর গাড়িও ভাঙচুর করা হয়েছে, তাকেও বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানাতে দেওয়া হয়নি। তিনি বারবার বলেছেন, বঙ্গবন্ধু আর শেখ হাসিনা এক নয়, শেখ হাসিনা আর মুক্তিযুদ্ধ এক নয়। কথাগুলো তিনি যথার্থ বলেছেন। আমিও উনার বক্তব্য মনেপ্রাণে বিশ্বাস করি। তাঁর কথার প্রমাণ মিলেছে শেখ হাসিনা সরকারের দীর্ঘ ১৫-১৬ বছরের দেশ পরিচালনায়। একজন প্রধানমন্ত্রী যদি ৪০০ কোটি টাকা মেরে দেওয়ার পরও তার পিয়নকে না ধরে মিডিয়ার সামনে বলে তাঁর পিয়নের দুর্নীতির কথা! এছাড়াও তাঁর আশেপাশে থাকা দরবেশদের মত লোকের দুর্নীতি সহ আরো অনেকের দুর্ণীতি ছিলো আকাশচুম্বী! সেগুলো কি করে ধরবেন? দুর্নীতিবাজদের চারপাশে বসার সুযোগ করে দিয়েছেন স্বয়ং শেখ হাসিনা নিজেই। এমনকি যাদের উপদেশে তিনি চলতেন তাদের সাথে বঙ্গবন্ধুর তুলনা করা সমীচীন নয়।

বলা বাহুল্য প্রধানমন্ত্রী পদ এর চেয়ে কঠিন আরো যে যে দায়িত্ব পালন করার কথা ছিলো, সেগুলো কি তিনি ঠিকমতো করতে পেরেছেন? এই প্রশ্ন স্বাভাবিকভাবে এসে যায়। আফসোস লাগছে আজ, কীভাবে বঙ্গবন্ধুর নিজ হাতে গড়া ছাত্রলীগ, আপাদমস্তক একটি সন্ত্রাসী সংগঠনে পরিণত হলো? যে দল কয়েক দশক পর যুদ্ধাপরাধের বিচার করে আমাদের কলঙ্কমুক্ত করলো, সেই দলই বা কী করে আয়নাঘরে বিনা বিচারে মানুষকে আটকে রাখে? বিএনপির আমলে যেমন হাওয়া ভবন সৃষ্টি করে ব্যাপক সমালোচিত হয়েছিল, তেমনি আওয়ামীলীগ-ও আয়নাঘর তৈরি করে গুম খুনসহ নানা অপকর্মের কথা বেড়িয়ে আসছে। আসলে এদের বঙ্গবন্ধুর নীতি-আদর্শ ছিলো শুধু মুখেমুখে, কাজে কর্মে মোটেও প্রকাশ পায়নি, যা আজ স্পষ্ট হয়েছে দেশবাসীর কাছে।

ধানমন্ডির ঘটনায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মীদের জড়িত থাকার অভিযোগও আনেন কেউ কেউ। অবশ্য এ ঘটনার সঙ্গে কোনো সমন্বয়ক বা সহ-সমন্বয়ক জড়িত থাকলে তাদেরকে বহিষ্কার করা হবে বলেও জানিয়েছেন অন্যতম সমন্বয়ক সারজিস আলম। আমি মনে করি, অতি উৎসাহী এরা প্রকৃত অর্থে ছাত্র নয়, ছাত্রের লেবাসে কতিপয় সুবিধাবাদী দুষ্ট প্রকৃতির লোক এই ন্যাক্কারজনক কর্মকাণ্ড ঘটিয়েছেন। এরা এখনও থেমে নেই। সুযোগ বুঝে দুষ্কৃতিকারীরা সারাদেশে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান দখল, ভাগাভাগি, মারামারিতে ভীষণ ব্যস্ত! সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকারেরও সময় লাগছে সবকিছু গুছিয়ে নিতে। মাঠে আগের মতো প্রশাসনের ভালো ভূমিকা না থাকায় যে যেভাবে পারছে নিজের সর্বোচ্চ শক্তি প্রয়োগ করে ভিন্ন মতাবলম্বীদের হেনস্তা করছে! প্রশাসনের উচিত এদিকে নজর দেওয়া এবং যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা। এতে সবার মাঝে আস্থা ফিরে আসবে। এখানে উল্লেখ্য যে, কেউ যদি অপরাধী হোন তাহলে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণেও শিথিলতা অগ্রহণযোগ্য, এটিই সচেতন নাগরিকদের চাওয়া।

গতবছরের নভেম্বর ৭ তারিখে একটি নিবন্ধে লিখেছিলাম, ‘কি হবে জয় বাংলার স্লোগান দিয়ে, যদি বঙ্গবন্ধুর নীতি-আদর্শ না থাকে হৃদপিণ্ডে।’ যা আজ বাস্তবতার সাথে হুবহু মিল পাওয়া যাচ্ছে। এখানে লক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে, মানুষ এখন আওয়ামী লীগ দেখলেই স্লোগান দেয়ৎ‘ভুয়া ভুয়া বলে ’আসলে এরা কী ভুয়া লীগ? সরকারের দেশ চালাতে সর্বাগ্রে প্রয়োজন একটি নিরপেক্ষ, নিবেদিতপ্রাণ, নির্লোভ মাঠ প্রশাসনের। কিন্তু বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে আমরা কী দেখতে পেলাম? সবক্ষেত্রে দলীয়করণ। মাঠ পর্যায়ের নেতাও ছিল বেপরোয়া। যে যেমন পেরেছেন খেয়েছেন লুটপাট করে। এদেশের যতোই উন্নয়নের কথা বলা হোক, এই উন্নয়ন কর্মকান্ডে শেখ হাসিনা বা তাঁর দলের দুর্নীতিবাজ শীর্ষ নেতাদের বাঁচাতে পারবে বলে মনে হয় না। যে ভুল করেছে যেভাবে অন্যায়, দুর্নীতি, খুন করেছে। তাতে পূর্বের ন্যায় আওয়ামী লীগকে ফিরে আসতে নেতাদের কতো জেল জুলুম অত্যাচার নির্যাতন ভোগ করতে হবে, তা কেবল সৃষ্টিকর্তাই জানেন। একসময় দেশের প্রতিটি মানুষের হৃদস্পন্দনে যে দলের নাম ছিল, কেন সেই দলটি ঘুণাক্ষরেও টের পেলো না যে দেশের মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে তাদের কোনো যোগাযোগ নেই?

গণঅভ্যুত্থানের পরেও আন্দোলন থেমে নেই। বিভিন্ন ইস্যুতে আন্দোলন চলছেই। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বিগত দিনের সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত চাকুরীজীবীরা তাঁদের দাবি আদায়ে ঢাকার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে অবস্থান করছে। এতে সাধারণ মানুষের চলাচলে ভোগান্তি চরমে। গতকাল মতিঝিল থেকে আগারগাঁও যেতে আমার মোটরবাইকে সময় লেগেছে দু’ঘন্টা। তা-ও ঘুরে যেতে হয়েছে মগবাজার ফ্লাইওভার হয়ে। যেতে যেতে পথে দেখলাম, প্রেসক্লাবের সামনে গ্রামপুলিশের বিশাল মানববন্ধন। তাদেরও একদফা দাবি। আরো দেখলাম আগারগাঁও থেকে বিজয় সরণি পর্যন্ত দীর্ঘ লাইন মানববন্ধনের। এভাবে প্রতিদিন অনেক দাবি-দাওয়া নিয়ে রাস্তায় বের হচ্ছে অনেক মানুষ। কিন্তু এই মুহূর্তে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সামনে এমন দাবি দাওয়া কতোটা যৌক্তিক, তাও ভেবে দেখবার আহ্বান জানাচ্ছি। সাথে যৌক্তিক দাবির প্রতি সহানুভূতিশীল আচরণও জরুরি। সার্বিক বিষয় নিয়ে বর্তমান সরকারকে অনেকটা চ্যালেঞ্জ নিতে হবে। তারা কী পারবে এই বঞ্চিত অবহেলিত মানুষের দাবিগুলো পূরণ করতে! কোটাবিরোধী আন্দোলনে মানুষের প্রাণহানির পাশাপাশি দেশের সম্পদের যে পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, তা ঠিকঠাক করতে অনেক সময় লেগে যাবে। এমনিতেই নানা সংকটে ভুগছে সদ্য গণঅভ্যুত্থানে নতুন রূপ পাওয়া দেশে। তারপরেও অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে অনেক আশা আকাঙ্ক্ষা আছে সাধারণ মানুষের। জানি না পরিবর্তনের সঠিক লক্ষ্য অর্জিত হবে কি না! তবুও আশায় চেয়ে আছি, ভালো কিছু হবে আসছে সময়ে, আশাবাদী আঠারো কোটি জনতা।

লেখক : কবি, কলামিস্ট ও সাংবাদিক